তাজা খবর: |
Monday, 11 December, 2023, at 2:13 PM | ENGLISH |
![]() |
|
সারাদেশঅসহায় রোজিনার জীবন যুদ্ধ অসুস্থ স্বামীর অভাবের সংসারের হাল ধরতে পথে নেমেছেন স্ত্রী রোজিনা আক্তার।"টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:
প্রকাশ :
19 নভেম্বর 2023, রবিবার,
সময় :
23:01,
পঠিত 297 বার
![]() অটোরিকশা চালক রোজিনা বলেন, আমার অটোতে মেয়ে যাত্রীরা কম উঠে মনে করে আমি যদি অ্যাকসিডেন্ট করি তাছাড়া ছেলে যাত্রীরাই বেশি উঠে। আমি খুব হিসাব করে অটো চালাই। খুব দ্রুত গতিতেও না, আবার একেবারে আস্তেও না। এখনও আমি অ্যাকসিডেন্ট করি নাই। শহরের পুরুষ অটোরিকশা চালকরা আমাকে সম্মান করে। আমি যখন রাস্তার ওপর অটো ঘুরাই তারা নিজেদের অটো দাঁড় করে রেখে আমাকে সুযোগ করে দেন। বড় গাড়ির চালকরাও যখন দেখেন আমি নারী তখন তারাও আমার প্রতি সম্মান দেখান। অটোরিকশার যাত্রী জয়েন উদ্দিন বলেন, 'অটোর চালক একজন নারী দেখেও আমি তার অটোতে উঠি। যাত্রী আনোয়ার হোসেন বলেন, নারী অটোচালকের পাশের সিটে বসতে কিছুটা সংকোচ বোধ হলেও চালক নির্বিকার। রোজিনার সাহসিকতাকে বাহবা জানিয়ে স্থানীয় এক পথচারী বলেন, সে অনেক দিন যাবত অটোরিকশা চালায় আমি রোজিনাকে স্যালুট জানাই। একজন পুরুষের চেয়ে একজন নারী কোনো দিকে কম নন, রোজিনা তা প্রমাণ করেছেন। জানা যায় ৩ মেয়ে ২ ছেলের মধ্যে বড় মেয়ে রোজিনাকে বাবা-মাহীন এক অনাথ যুবকের কাছে বিয়ে দিয়েছিলেন তার গরিব তাঁত শ্রমিক বাবা। বিয়ের পর জন্ম হয় ২ কন্যা সন্তানের। অটোরিকশা চালিয়ে কোনক্রমে সংসার চালাচ্ছিলেন স্বামী রফিকুল। কিন্তু, ছেলেবেলায় দুর্ঘটনায় রফিকুলের এক চোখ সম্পূর্ণ নষ্ট অপরটি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। পরে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত চোখের দৃষ্টি শক্তি আরও ক্ষীণ হয়ে গেলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠেছিল অটোরিকশা চালানো। সংসারের উপার্জনক্ষম মানুষটি অচল হয়ে পড়ায় স্বামীর চিকিৎসার খরচ, ঘরভাড়া, খাওয়ার পাশাপাশি মেয়েদের পড়ালেখার খরচ বন্ধ হয়ে যায়। দিশেহারা রোজিনা মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করে এবং এনজিও থেকে ধার করে কোনক্রমে সংসার চালাতে পারলেও মেয়েদের লেখাপড়া ও অন্যান্য খরচ জোগাড় করতে পারছিলেন না। এমন পরিস্থিতিতে রোজিনা নিজে অটোরিকশা চালাতে আগ্রহ প্রকাশ করে এবং স্বামী রফিকুলের কাছে তা শিখতে চান। গ্রামের স্কুলের মাঠে স্বামীর কাছে অটোরিকশা চালানো শেখেন রোজিনা। পরে গ্রামের পথে ৫-৭ দিন শিখে বাড়ি থেকে অটোরিকশা নিয়ে একদিন সরাসরি জেলা শহর টাঙ্গাইলে চলে আসে রোজিনা। এভাবে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে যান তিনি। রোজিনা আরও জানান, অটো চালানো চিন্তাটা আমার জন্য খুব সহজ ছিল না। ৭ এবং ১৩ বছর বয়সী মেয়েকে বাড়িতে রেখে অটোরিকশা নিয়ে সারাদিন রাস্তায় থাকতে হয়। ভাড়া বাড়িতে থাকার খরচ কমাতে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এক টুকরো জমি কিনেন রোজিনা। পরে সেখানে সরকার তাকে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর করে দেয়। ঘারিন্দা ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আইসড়া গ্রামের বাবুল সরকার বলেন, রোজিনাকে সরকার থেকে একটি ঘর নির্মান করে দিয়েছে তাকে যদি আরেটু সহযোগীতা করা হলে ধার-দেনা কমে যাইত, রোজিনা অনেক দিন যাবত অটোরিকশা চালান আগে গ্রামের কিছু মানুষ বিদ্রূপ করতো। পরে রোজিনার সংকল্প আর দৃঢ়তা দেখে তারা থেমে যায়। এখন আমরা তাকে নিয়ে গর্ব করি।' রোজিনা বলেন, 'যখন খুব অভাব-অনটনে দিন কাটাচ্ছিলাম তখন মানুষ আমাদের ঠাট্টা করেছে। যখন জীবনের তাগিদে অটোরিকশা চালাতে শুরু করি তখনও নানা কথা বলেছে। তবে এখন তারাই আমাকে সম্মান করেন।' রোজিনার ২ মেয়ে বড় মেয়ে আইসড়া উচ্চ বিদ্যালয় পড়ে ছোট মেয়ে স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ছে। রোজিনা বলেন, 'আমার তো থেমে যাওয়া চলবে না। মেয়েদের শিক্ষিত করতে হবে। ধারদেনা শোধ করতে হবে। আমি অটোরিকশা চালিয়েই স্বামী সন্তান কে মানুষ করতে চাই।
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
সারাদেশ পাতার আরও খবর
|
সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
|
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন জিটুসম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : প্ল্যানার্স টাওয়ার, ১০তলা, ১৩/এ বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, বাংলামোটর, শাহবাগ, ঢাকা-১০০০, বাংলাদেশ।
|